
জলপাই তেল; ছবি: সংগৃহীত
শীতকালে ত্বকের যত্নে জলপাই তেলের জুড়ি মেলা ভার। শুষ্ক ও স্বাভাবিক ত্বকের জন্য তো বটেই, তৈলাক্ত ত্বকের জন্যও এই তেল দারুণ কার্যকরী।
জলপাই তেলের ব্যবহার আজকের নয়; প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। কোনো প্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন এবং সর্বজনীন ব্যবহারোপযোগী তেলটি। প্রকৃতির অসাধারণ উপহার হিসেবে রূপচর্চা, চুলের পরিচর্যা কিংবা খাবারে অলিভ অয়েলের ব্যবহার সর্বাত্মক। প্রতি ১০০ গ্রাম অলিভ অয়েলে ভিটামিন-ই, ভিটামিন-কে এবং আয়রনের মাত্রা যথাক্রমে ১৪, ৬০ ও ০.৫৬ মিলিগ্রাম। ত্বক ও চুলের যত্নে অলিভ অয়েলের ব্যবহার দেখে নিন-
শুষ্ক ত্বকের জন্য
অতিরিক্ত
শুষ্কতার কারণে ত্বকে বলিরেখা দেখা দিলে জলপাই তেলের প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। এ
জন্য ১ চা-চামচ জলপাই তেলের সঙ্গে একটি ডিমের কুসুম এবং দেড় চা-চামচ ছোলার ডালের
বেসন মিশিয়ে পুরো মুখে লাগাতে হবে। ১৫ মিনিট পর মুখ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন এই প্যাকটির ব্যবহার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য
করবে।
স্ক্র্যাবার হিসেবে ব্যবহার করতে আধা চা-চামচ জলপাই তেলের সঙ্গে ২
টেবিল চামচ কফি, ১ টেবিল চামচ মধু, ১ টেবিল চামচ ব্রাউন সুগার ভালো করে মিশিয়ে
পুরো শরীরে লাগাতে পারেন। সপ্তাহে ১ দিন এই স্ক্র্যাবারটি ব্যবহার করলে ত্বকের মৃত
কোষ দূর হবে এবং ত্বক সজীব থাকবে।
জলপাই তেল ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও দারুণ কার্যকরী। ১ কাপ অ্যালোভেরা জেল ২ কাপ গরম
পানিতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। এবার পানিটুকু ছেঁকে জেলটুকু বের করে
নিন। এতে অ্যালোভেরা জেলে থাকা ব্যাকটেরিয়াগুলো মরে যাবে। অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে
২ টেবিল চামচ জলপাই তেল, ২টি ই ক্যাপ এবং এক টেবিল চামচ গ্লিসারিন মিশিয়ে ভালো করে
ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এই মিশ্রণটি ১ মাস সংরক্ষণ করা যাবে। যাদের ত্বক অনেক বেশি
শুষ্ক তারা টানা তিন মাস প্রতিদিন এই ময়েশ্চারাইজারটি ব্যবহার করলে পরে আর ত্বকের
শুষ্কতায় ভুগবেন না।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য
যাদের
ত্বক তৈলাক্ত তারা শুধু শীতকালে এই প্যাকটি ব্যবহার করবেন। গরমকালে তৈলাক্ত ত্বকে
জলপাই তেল ব্যবহার না করাই ভালো। তুলসী পাতা ও পুদিনা পাতার পেস্ট ১ চা-চামচ, মটর
ডালের বেসন ১ চা-চামচ, আধা চা-চামচ গ্রিন টি পেস্ট করে আধা চা-চামচ জলপাই তেলের
সঙ্গে মিশিয়ে নিন। সপ্তাহে ১ দিন ১৫ মিনিট করে এই প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন।
স্ক্র্যাবার হিসেবে ব্যবহার করতে ১ টেবিল চামচ জলপাই তেলের সঙ্গে তিন টেবিল চামচ চিনি, ৩ টেবিল চামচ চালের গুঁড়া মিশিয়ে সপ্তাহে ১ দিন ১০ মিনিট করে এটি ব্যবহার করতে পারেন।
স্বাভাবিক ত্বকের জন্য
স্বাভাবিত ত্বকের জন্য জলপাই তেলের প্যাক বেশ কার্যকরী। ১ চা-চামচ জলপাই তেল, আধা চা-চামচ
মধু, আধা চা-চামচ ডিমের সাদা অংশ একসঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে পারেন। ১৫ থেকে ২০
মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
ময়েশ্চারাইজার হিসেবে আধা কাপ জলপাই তেলের সঙ্গে আধা কাপের অর্ধেক গ্লিসারিন আর আধা
চা-চামচ প্রাকৃতিক কর্পূর মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে পারেন। এটি সারা বছর সংরক্ষণ করা
যাবে।
স্ক্র্যাবার বানাতে আধা কাপ চিনি, আধা কাপ জলপাই তেল একসঙ্গে মিশিয়ে সপ্তাহে একদিন স্ক্র্যাবার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।
চুলের যত্নে
জলপাই
তেল মাথার ত্বকে খুব ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। যাদের মাথার ত্বক
শুষ্ক তারা ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, ১টি মাঝারি আকারের পেঁয়াজ, অর্ধেক কলা,
সামান্য মসুর ডালের বেসন, দেড় চামচ মধু একসঙ্গে ব্লেন্ডারে ভালো করে ব্লেন্ড করে
নিন। এবার মিশ্রণটি মাথার তালুতে লাগিয়ে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। এরপর ভালোভাবে
চুলগুলো ধুয়ে নিন। এভাবে একটানা তিন দিন ব্যবহারের পর চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিন।
তৈলাক্ত
ত্বক যাদের তারা ২ টেবিল চামচ জলপাই তেল, ২ টেবিল চামচ লেবুর রস, অ্যালোভেরা জেল,
১ টেবিল চামচ ছোলার ডালের বেসন ও দেড় টেবিল চামচ মেথি গুঁড়া ভালোভাবে ব্লেন্ডারে
ব্লেন্ড করে নিন। চুলে লাগানোর এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর ভালোভাবে শ্যাম্পু করে নিন।
এভাবে সপ্তাহে দুই দিন এটি ব্যবহার করবেন।